-“এই যে বাবু শুনছো?”
আমি চমকে উঠি। অপরিচিত
অনেকগুলো
মানুষের
মাঝে
‘বাবু’
ডাকটা
বড্ড
পরিচিত
লাগে।
‘বাবু’
নামটা
ঠিক
এ-জায়গায়
চলে
না।
বাসায়
হলে আলাদা
কথা। বাসার সবাই আমাকে এই নামেই ডাকতো। এখনো
ডাকে। বিশেষ করে বড়আপু। ছোটোবেলা
থেকে
বাবু
নামে
সবাই
ডাকে-
বাবু
আস্তে
আস্তে
বড়
হয়,
সার্টিফিকেট
আর
স্কুলের
খাতায়
তার
ইয়া-আ
বড়
ভালো
নামটা
স্থান
পায়,
কিন্তু
বাসার
সবার
কাছে
বাবু
বাবু-ই
থাকে।
ছোটোতে
বাবু,
বড়
হয়েও
বাবু।
ভালই
তো।
ডাকটা
শুনতে
আমার
খারাপ
লাগে
না।
ছোট
আপুর
মুখে
অনেকবার
গল্প
বলতে
শুনেছি-“
তখন
তুমি হও
নাই। আমরা
দিনাজপুরে থাকি।
খানসামায়। আমি
আল্লাহর কাছে
প্রত্যেকদিন দোয়া
করতাম, আল্লাহ্, আমাদের
বাসায় যাতে
একটা লালবাবু
আসে। আমার
যাতে একটা
লালবাবু ভাই
হয়। একদিন আল্লাহ্
আমার দোয়া
কবুল করলেন। আমাদের
বাসায় একটা
টুকটুকে লাল
বাবু আসলো।
সেইটা আর
কেউ না, সেইটা হচ্ছো তুমি। বুঝলা বাবু??”
ভার্সিটির সেন্ট্রাল ভাইভার সময় টেনশান কাজ করত। বন্ধুরা বলতো-“ কিরে লাল হয়ে গেসস ক্যান?” স্যররা question জিজ্ঞেস করলেও একই অবস্থা! আতিক তার বিখ্যাত হাসি দিয়ে কৌশিককে বলতো-“মুবিনের দিকে দেখ!!” আমি লজ্জা পেয়ে বলি- “কই?”
সেদিন ইউনিভার্সিটিতে প্রোগ্রামিং ল্যাব নিচ্ছিলাম। টানা আড়াই ঘণ্টা লেকচার দিয়ে বেশ হাঁপিয়ে উঠেছিলাম আমি। হঠাৎ এক স্টুডেন্ট দাড়িয়ে বলে উঠল- “স্যার, আপনি তো দেখি লাল হয়ে গেছেন!” আমার আপুর বলা লালবাবুর গল্পটা মনে পরে যায়। ছোট্ট
একটা হাসি দেয়ে ওর কথাটা উড়িয়ে দেই। ওরা হয়তো ওই হাসির অর্থ বোঝে না..
-“বাবু শুনতে পাচ্ছ?”
আমি আবার চমকে উপরের
দিকে
তাকাই।
মধ্যবয়সী
একজন মানুষ। গায়ে
স্যুট,
গলায়
মাফলার,
হাতে
ইয়া
বড়
একটা
ট্রলি
ব্যাগ। পাশে
বৃদ্ধ
এক
লোক।
-“আঙ্কেল আমাকে বলছেন?”
-“হ্যা বাবু, ট্রেনে টিকেট পাইনি, আর তোমার দাদু তো বুড়ো মানুষ। একটু চেপে বসতে পারবা?”
এতক্ষনে
আমার
ঘুমের
ঘোর
কাটে।
কুয়েটে
গিয়েছিলাম
একটু
কাজে।
এখন
সীমান্ত
এক্সপ্রেস
ট্রেনে
খুলনা
থেকে
আব্দুলপুর
যেতে
হবে।
নাইনটি
ডিগ্রি
আঙ্গেলের
সিট।
টানা
আট
ঘণ্টার
জার্নি।
শীতের দিন, এমনিতেই অনেক
ঠান্ডা। চেপে বসতে দোষ কি.. “sure, আঙ্কেল” বলে আমি নিঃশব্দে চেপে যাই। বৃদ্ধ দাদু শীতের
প্রকোপে
কাঁপতে
থাকে।
তারপর
আবারও
চোখ
বন্ধ
করি
আমি।
অনেক চেষ্টা করেও ঘুম আসে না আমার। ছোটবেলার অজস্র
ঘটনা
মাথায়
গিজগিজ
করতে
থাকে। দিনাজপুর,
পঞ্চগড়,
রংপুর,
দাদুবাড়ি
আর
নানুবাড়ি। নানুবাড়ির
পুকুর
পার
আর
নানীর
হারিয়ে
যাওয়া
ওষুধের
কথা।
ওষুধটা
খুঁজে
দিয়েছিলাম
আমি।
আমার
জীবনে
নানীকে
সবথেকে
খুশী
দেখেছিলাম
ওইদিনে।
দাদু
আর
নানু
কখনো
ফিরে
আসবে
না।
হয়তো
আমার
হারিয়ে
যাওয়া
দিনগুলোও
আর
ফিরে
আসার
নয়।
আমি
ট্রেনের
হুইসেলের
দিকে
মনোযোগ
ঘোরানোর
চেষ্টা
করি।
ঘুটঘুটে
অন্ধকার
রাতে
চলন্ত
ট্রেনের
হুইসেল
মনে
করিয়ে
দেয়
হ্যারি
আর
হারমিওনের
কথা... Hogwarts
Express.. প্লাটফর্ম নং: 9/3/4, ট্রেন
নাম্বার
৫৯৭২…
#উপলব্ধি
#dedicated_to_my_two_loving_elder_sisters
০৮/০১/২০১৭