Wednesday, May 3, 2023

সময়ের মূল্য

 

ক্লাস টেন এ "সময়ের মূল্য" নামে একটা প্রবন্ধ পড়েছিলাম। খুব বোরিং একটা রচনা, কিছুতেই মুখস্ত হতে চায় না। হয়তো না বুঝে মুখস্থ করার ফল। কিন্তু বড় হবার সাথে সাথে হয়তো অনেক কিছুই বুঝে আসে, তখন মুখস্থ না করেই হাজার ওয়ার্ডের একটা রচনা লিখে দেয়া যায়। যেমনটা আজকে আমি লিখবো–

সময় শুধু মূল্যবান নয়, অদ্ভুত একটা জিনিশ। আগে মানুষ চাইতো টাকা, এখন চায় সময়।

আপনার বন্ধুবান্ধব আপনার থেকে সময় চাইবে। সময় দিন—আপনার চারপাশে অনেক বন্ধুবান্ধব থাকবে। আড্ডা হবে আর চিল হবে। আপনার পরিবার আপনার থেকে সময় চাইবে। সময় দিন—আপনার পরিবার আপনার পাশে থাকবে। আপনার প্রেমিকার আবদার তাকে সময় দিতে হবে। সময় দিয়ে তার সব আবদার পুরণ করুন, সে আপনাকে অনেক ভালবাসবে।

সময় দিন–আপনি পড়াশুনায় অনেক ভালো করবেন, সময় নিয়ে রান্না করুন—রান্না অনেক ভালো হবে, অন্যথায় পোড়া তরকারি খেতে হবে। রিসার্চে সময় দিন—অনেক পেপার পাবলিশ হবে, আপনার জবে অনেক সময় দিন—ওভারটাইম করুন, আপনার বস আপনাকে অনেক পছন্দ করবে। জবে সহজে প্রমোশন হবে। সময়ের  বিনিময়ে সময় আপনাকে টাকা দেবে, সম্মান দেবে, ভালোবাসা দেবে।

এতকিছুতে সময় দিতে গিয়ে হঠাৎ একসময় চিন্তা করে দেখবেন—আপনার নিজের জন্যই আপনার কোনো সময় নেই। তারপর একসময় নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যান—দেখবেন সবাই আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে। চোখ খুলে দেখবেন—কেউ নেই, একা নিজেই।

সমাজ নামে একটা অদৃশ্য শৃঙ্খলে আমরা আজ আটকে আছি সবাই। সবাই আউটপুট দেখতে চায়, জটিল জটিল প্রশ্ন করে—এখন কি করছো (মানে এখন কি জব করছেন? ভালো জব নাকি খারাপ জব? সরকারী নাকি বেসরকারি জব, কম বেতনের নাকি বেশি বেতনের জব)? ক্যারিয়ার প্ল্যান কি? আজ থেকে পাঁচ বছর পর তুমি নিজেকে কোন পজিশনে দেখতে চাও?

কেউ জিজ্ঞেস করবে না—আপনি কেমন আছেন কিংবা রাতে কিছু খেয়েছেন কিনা। হয়তো খুব বেশি কারটেসি হলে জিজ্ঞেস করবে—শরীর কেমন? কেউ জিজ্ঞেস করবে না—আপনার মনের অবস্থা কেমন।

একবার নিজেকে পাল্টা প্রশ্ন করে দেখুন—কেমন আছে আপনি? আপনি ভালো নেই। রাতে শেষ কবে ভালভাবে খেয়েছেন? দেখবেন মনে করতে পারবেন না। শরীর কেমন? হয়তো এটা খেয়াল করার সময় পর্যন্ত হয় নি আপনার। আর মনের অবস্থা? তা কি ভালো থাকে কখনো?

সবাই আপনার থেকে সময় চইবে, আউটপুট চাইবে, কি করে বুঝাবেন যান্ত্রিক এ জীবনে আর সমাজের এ চাপে টিকে থাকার জন্য আপনার নিজেকে দেয়ার মতো সময়টুকুও আপনার নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠিকই বলেছেন—

"সময়ের মহাসমুদ্রে আছি, কিন্তু এক মুহূর্ত সময় নেই"।

~হাসান,

কেনসিংটন, নিউ সাউথ অয়েলস,অস্ট্রেলিয়া

০২-০৫-২০২৩

Tuesday, April 18, 2023

ফ্রিজিং পয়েন্ট

 বরফ দেখলে কেন জানি আমার মানুষের কথা মনে হয়। মানুষের মধ্যে 'ফ্রিজিং পয়েন্ট' বলে একটা ব্যাপার থাকে।

.
যে পয়েন্টে গেলে মানুষ খায়-দায়,ঘুমায়,টিভি দেখে,ফেসবুকিং করে। ক্লাস করতে যায়,আড্ডা দেয়। কিন্তু সে ভিতরে জমে আছে,বরফের মতো।
মন খারাপ?
-না।
হতাশ?
-না।
কিছু চাইছো?
-না।
খারাপ লাগছে?
-না।
ভালো লাগে?
-তাও না।
.
অথচ সে পরীক্ষায় ফেল করে নি। তাকে কেউ ভালোবাসায় তীক্ষ্ম প্রত্যাখান করে নি। সে ক্ষুধার্ত হয়ে রাস্তায় চট বিছিয়ে শুয়ে নেই। সে শুধু জমে আছে,শুকিয়ে আছে। ঝরা পাতার মতো।
.
যে প্রশ্নটা তখন সবচেয়ে বেশি কানে বাজে,'হোয়াট'স রং উইথ মি?' আমি চলছি,সুস্থ-স্বাভাবিক। কিন্তু এই প্রকৃতি,এই কোলাহল,এই শহর,এই মায়াজাল,এই একঘেয়ে আবেগ কোনোকিছুই আমাকে টানে না। আমাকে কিছু স্পর্শ করছে না। কিংবা আমিই হয়তো স্পর্শের বাইরে আছি। হয়তো!
.
আমাদের সবারই কখনো কোথাও একটা ফ্রিজিং পয়েন্ট ছিল। বরফখন্ডের মতো ভেসে ছিলাম প্রশান্ত কিংবা অটলান্তিকে। ভেঙ্গেছি,চুরমার হয়েছি,ভাগ্য প্রসন্ন হলে গলতে পেরেছি। একটু উত্তাপের আশায় অপেক্ষা করেছি দিন,মাস,বছর কিংবা একটা জীবন...

- Written by Shadman Zahin, BUET


Monday, March 6, 2023

রুপকথার রাত

এক সময় শবে বরাত আর শবে ক্বদর ছিলো আমার জন্য খুব স্পেশাল দুটো রাত। আমি ক্যালেন্ডার ধরে এই দুই দিন মার্ক করে রাখতাম, হিসাব করতাম- কখন এই দিন আসবে।

তখন ক্লাস সেভেন-এইটে পড়ি। ছোট্টো একটা শহরে থাকি। এলাকায় আমাদের একটা ছোটো গ্রুপ ছিলো। আমি, মামুন, আর মুস্তাকিম। এডভেঞ্চার টিম। মাঝে মধ্যে আমাদের সাথে যোগ দিতো মোহাম্মদ আলী আর আমিনুল। এই বন্ধুত্ব ছিলো নিখাঁদ, এর মধ্যে কোনো স্বার্থ ছিলো না, দেনা-পাওনা ছিলো না, আড্ডার কোনো স্পেসিফিক টপিক ছিলো না, তবে আড্ডা দিলে সময় ফুরাতো আলোর বেগে।
শবে বরাত আর শবে ক্বদরের রাতে অনেক জমজমাট থাকতো পুরো শহর, ইশার নামাজ শেষে ইসলামবাগ মসজিদের ইমাম সাহেব একটা বয়ান দিতেন, আমরা মনোযোগ দিয়ে বয়ান শুনতাম, তারপর মিষ্টি কিংবা জিলাপী বিতরন। আমি একটা জিলিপী খেয়ে বাকিটা রেখে দিতাম আম্মু কিংবা আপুকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য।
তারপর ইমাম সাহেব সবাইকে নিয়ে যেতেন কেন্দ্রীয় কবরস্থানে কবর জিয়ারতের জন্যে। কবরস্থান এমনিতেই অনেক ভয়ের জায়গা, কিন্তু ঐসময় একটুও ভয় লাগতো না! তারপর বন্ধুদের সাথে শহরের মসজিদে মসজিদে ঘোরা আর নামাজ পড়া।
আমরা নামাজ খুব স্পিডে পরতাম, একজন আরেকজনের সাথে কম্পিটিশন করতাম। কে কতো রাকাআত নামাজ পরতে পারে। কারও সাথে দেখা হলেই বলতো - কতো রাকাত পরলি? সত্যি বলতে কখনো হিসেবও ভুলে যেতাম, আন্দাজে একটা বলে দিতাম।
নামাজ পরে ক্লান্ত হয়ে গেলে অন্য মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হতাম। সেখানে গিয়ে হয়তো নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচয় হতো, আড্ডা হতো, খানিকটা ইবাদতও হতো।
তারপর ক্লান্ত হয়ে গেলে রাত ২/৩ টায় একসময় মসজিদেই ঘুমিয়ে যেতাম আমরা। ঘুম ভাঙতো ফজরের আজানে।
এই রাত দুইটা ছিলো অনেক সেলিব্রেশনের, কারন এই রাতে সব পড়াশুনা মাফ, পরের দিন স্কুল বন্ধ, সবথেকে বড় কথা এই রাতে আড্ডা দিলে আব্বু-আম্মু বাসায় মাইন্ড করতো না। কেনো জানি কিছু বলতোও না।
তারপর আস্তে আস্তে বড় হয়ে যাই, বাসা ছেড়ে মেসে থাকা শুরু করি, স্কুল পেরিয়ে কলেজ, কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটি, দেশ পেরিয়ে বিদেশ।
শবে বরাত আর শবে ক্বদর এখনো অনেক স্পেশাল রাত। সত্যি বলতে বিদেশে আসার পর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসটা একদম কমেনি। তবে এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছি,
এখন আর ক্যালেন্ডার ধরে হিসেব করা হয় না, হঠাৎ কারও কাছে শুনলে সারপ্রাইজড লাগে- আজকে শবে বরাত।
এখন ঐ ইনভায়রনমেন্ট আর নেই, এখন কয়েক রাকাত নামাজ পরেই গেলে ক্লান্ত হয়ে যাই, অনেক রাকাআত নামাজ পরার মোটিভেশান পাই না, নামাজ শেষে জিলাপি খাওয়া হয় না অনেকদিন, আর মসজিদ তো আশেপাশে পাওয়া দুষ্কর।
এখন আর বন্ধুদের সাথে রাত জেগে আড্ডা দেয়া হয় না, কম্পিটিশান করে নামাজ পড়া হয় না, আর ছোটোবেলার ঐ রাতগুলোকে রুপকথার রাত মনে হয়।
The grass was greener
The light was brighter
When friends surrounded
The nights of wonder
~ হাসান
সিডনী, অস্ট্রেলিয়া
০৭.০৩.২০২৩