Wednesday, May 3, 2023

সময়ের মূল্য

 

ক্লাস টেন এ "সময়ের মূল্য" নামে একটা প্রবন্ধ পড়েছিলাম। খুব বোরিং একটা রচনা, কিছুতেই মুখস্ত হতে চায় না। হয়তো না বুঝে মুখস্থ করার ফল। কিন্তু বড় হবার সাথে সাথে হয়তো অনেক কিছুই বুঝে আসে, তখন মুখস্থ না করেই হাজার ওয়ার্ডের একটা রচনা লিখে দেয়া যায়। যেমনটা আজকে আমি লিখবো–

সময় শুধু মূল্যবান নয়, অদ্ভুত একটা জিনিশ। আগে মানুষ চাইতো টাকা, এখন চায় সময়।

আপনার বন্ধুবান্ধব আপনার থেকে সময় চাইবে। সময় দিন—আপনার চারপাশে অনেক বন্ধুবান্ধব থাকবে। আড্ডা হবে আর চিল হবে। আপনার পরিবার আপনার থেকে সময় চাইবে। সময় দিন—আপনার পরিবার আপনার পাশে থাকবে। আপনার প্রেমিকার আবদার তাকে সময় দিতে হবে। সময় দিয়ে তার সব আবদার পুরণ করুন, সে আপনাকে অনেক ভালবাসবে।

সময় দিন–আপনি পড়াশুনায় অনেক ভালো করবেন, সময় নিয়ে রান্না করুন—রান্না অনেক ভালো হবে, অন্যথায় পোড়া তরকারি খেতে হবে। রিসার্চে সময় দিন—অনেক পেপার পাবলিশ হবে, আপনার জবে অনেক সময় দিন—ওভারটাইম করুন, আপনার বস আপনাকে অনেক পছন্দ করবে। জবে সহজে প্রমোশন হবে। সময়ের  বিনিময়ে সময় আপনাকে টাকা দেবে, সম্মান দেবে, ভালোবাসা দেবে।

এতকিছুতে সময় দিতে গিয়ে হঠাৎ একসময় চিন্তা করে দেখবেন—আপনার নিজের জন্যই আপনার কোনো সময় নেই। তারপর একসময় নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যান—দেখবেন সবাই আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে। চোখ খুলে দেখবেন—কেউ নেই, একা নিজেই।

সমাজ নামে একটা অদৃশ্য শৃঙ্খলে আমরা আজ আটকে আছি সবাই। সবাই আউটপুট দেখতে চায়, জটিল জটিল প্রশ্ন করে—এখন কি করছো (মানে এখন কি জব করছেন? ভালো জব নাকি খারাপ জব? সরকারী নাকি বেসরকারি জব, কম বেতনের নাকি বেশি বেতনের জব)? ক্যারিয়ার প্ল্যান কি? আজ থেকে পাঁচ বছর পর তুমি নিজেকে কোন পজিশনে দেখতে চাও?

কেউ জিজ্ঞেস করবে না—আপনি কেমন আছেন কিংবা রাতে কিছু খেয়েছেন কিনা। হয়তো খুব বেশি কারটেসি হলে জিজ্ঞেস করবে—শরীর কেমন? কেউ জিজ্ঞেস করবে না—আপনার মনের অবস্থা কেমন।

একবার নিজেকে পাল্টা প্রশ্ন করে দেখুন—কেমন আছে আপনি? আপনি ভালো নেই। রাতে শেষ কবে ভালভাবে খেয়েছেন? দেখবেন মনে করতে পারবেন না। শরীর কেমন? হয়তো এটা খেয়াল করার সময় পর্যন্ত হয় নি আপনার। আর মনের অবস্থা? তা কি ভালো থাকে কখনো?

সবাই আপনার থেকে সময় চইবে, আউটপুট চাইবে, কি করে বুঝাবেন যান্ত্রিক এ জীবনে আর সমাজের এ চাপে টিকে থাকার জন্য আপনার নিজেকে দেয়ার মতো সময়টুকুও আপনার নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠিকই বলেছেন—

"সময়ের মহাসমুদ্রে আছি, কিন্তু এক মুহূর্ত সময় নেই"।

~হাসান,

কেনসিংটন, নিউ সাউথ অয়েলস,অস্ট্রেলিয়া

০২-০৫-২০২৩

Tuesday, April 18, 2023

ফ্রিজিং পয়েন্ট

 বরফ দেখলে কেন জানি আমার মানুষের কথা মনে হয়। মানুষের মধ্যে 'ফ্রিজিং পয়েন্ট' বলে একটা ব্যাপার থাকে।

.
যে পয়েন্টে গেলে মানুষ খায়-দায়,ঘুমায়,টিভি দেখে,ফেসবুকিং করে। ক্লাস করতে যায়,আড্ডা দেয়। কিন্তু সে ভিতরে জমে আছে,বরফের মতো।
মন খারাপ?
-না।
হতাশ?
-না।
কিছু চাইছো?
-না।
খারাপ লাগছে?
-না।
ভালো লাগে?
-তাও না।
.
অথচ সে পরীক্ষায় ফেল করে নি। তাকে কেউ ভালোবাসায় তীক্ষ্ম প্রত্যাখান করে নি। সে ক্ষুধার্ত হয়ে রাস্তায় চট বিছিয়ে শুয়ে নেই। সে শুধু জমে আছে,শুকিয়ে আছে। ঝরা পাতার মতো।
.
যে প্রশ্নটা তখন সবচেয়ে বেশি কানে বাজে,'হোয়াট'স রং উইথ মি?' আমি চলছি,সুস্থ-স্বাভাবিক। কিন্তু এই প্রকৃতি,এই কোলাহল,এই শহর,এই মায়াজাল,এই একঘেয়ে আবেগ কোনোকিছুই আমাকে টানে না। আমাকে কিছু স্পর্শ করছে না। কিংবা আমিই হয়তো স্পর্শের বাইরে আছি। হয়তো!
.
আমাদের সবারই কখনো কোথাও একটা ফ্রিজিং পয়েন্ট ছিল। বরফখন্ডের মতো ভেসে ছিলাম প্রশান্ত কিংবা অটলান্তিকে। ভেঙ্গেছি,চুরমার হয়েছি,ভাগ্য প্রসন্ন হলে গলতে পেরেছি। একটু উত্তাপের আশায় অপেক্ষা করেছি দিন,মাস,বছর কিংবা একটা জীবন...

- Written by Shadman Zahin, BUET


Monday, March 6, 2023

রুপকথার রাত

এক সময় শবে বরাত আর শবে ক্বদর ছিলো আমার জন্য খুব স্পেশাল দুটো রাত। আমি ক্যালেন্ডার ধরে এই দুই দিন মার্ক করে রাখতাম, হিসাব করতাম- কখন এই দিন আসবে।

তখন ক্লাস সেভেন-এইটে পড়ি। ছোট্টো একটা শহরে থাকি। এলাকায় আমাদের একটা ছোটো গ্রুপ ছিলো। আমি, মামুন, আর মুস্তাকিম। এডভেঞ্চার টিম। মাঝে মধ্যে আমাদের সাথে যোগ দিতো মোহাম্মদ আলী আর আমিনুল। এই বন্ধুত্ব ছিলো নিখাঁদ, এর মধ্যে কোনো স্বার্থ ছিলো না, দেনা-পাওনা ছিলো না, আড্ডার কোনো স্পেসিফিক টপিক ছিলো না, তবে আড্ডা দিলে সময় ফুরাতো আলোর বেগে।
শবে বরাত আর শবে ক্বদরের রাতে অনেক জমজমাট থাকতো পুরো শহর, ইশার নামাজ শেষে ইসলামবাগ মসজিদের ইমাম সাহেব একটা বয়ান দিতেন, আমরা মনোযোগ দিয়ে বয়ান শুনতাম, তারপর মিষ্টি কিংবা জিলাপী বিতরন। আমি একটা জিলিপী খেয়ে বাকিটা রেখে দিতাম আম্মু কিংবা আপুকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য।
তারপর ইমাম সাহেব সবাইকে নিয়ে যেতেন কেন্দ্রীয় কবরস্থানে কবর জিয়ারতের জন্যে। কবরস্থান এমনিতেই অনেক ভয়ের জায়গা, কিন্তু ঐসময় একটুও ভয় লাগতো না! তারপর বন্ধুদের সাথে শহরের মসজিদে মসজিদে ঘোরা আর নামাজ পড়া।
আমরা নামাজ খুব স্পিডে পরতাম, একজন আরেকজনের সাথে কম্পিটিশন করতাম। কে কতো রাকাআত নামাজ পরতে পারে। কারও সাথে দেখা হলেই বলতো - কতো রাকাত পরলি? সত্যি বলতে কখনো হিসেবও ভুলে যেতাম, আন্দাজে একটা বলে দিতাম।
নামাজ পরে ক্লান্ত হয়ে গেলে অন্য মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হতাম। সেখানে গিয়ে হয়তো নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচয় হতো, আড্ডা হতো, খানিকটা ইবাদতও হতো।
তারপর ক্লান্ত হয়ে গেলে রাত ২/৩ টায় একসময় মসজিদেই ঘুমিয়ে যেতাম আমরা। ঘুম ভাঙতো ফজরের আজানে।
এই রাত দুইটা ছিলো অনেক সেলিব্রেশনের, কারন এই রাতে সব পড়াশুনা মাফ, পরের দিন স্কুল বন্ধ, সবথেকে বড় কথা এই রাতে আড্ডা দিলে আব্বু-আম্মু বাসায় মাইন্ড করতো না। কেনো জানি কিছু বলতোও না।
তারপর আস্তে আস্তে বড় হয়ে যাই, বাসা ছেড়ে মেসে থাকা শুরু করি, স্কুল পেরিয়ে কলেজ, কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটি, দেশ পেরিয়ে বিদেশ।
শবে বরাত আর শবে ক্বদর এখনো অনেক স্পেশাল রাত। সত্যি বলতে বিদেশে আসার পর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসটা একদম কমেনি। তবে এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছি,
এখন আর ক্যালেন্ডার ধরে হিসেব করা হয় না, হঠাৎ কারও কাছে শুনলে সারপ্রাইজড লাগে- আজকে শবে বরাত।
এখন ঐ ইনভায়রনমেন্ট আর নেই, এখন কয়েক রাকাত নামাজ পরেই গেলে ক্লান্ত হয়ে যাই, অনেক রাকাআত নামাজ পরার মোটিভেশান পাই না, নামাজ শেষে জিলাপি খাওয়া হয় না অনেকদিন, আর মসজিদ তো আশেপাশে পাওয়া দুষ্কর।
এখন আর বন্ধুদের সাথে রাত জেগে আড্ডা দেয়া হয় না, কম্পিটিশান করে নামাজ পড়া হয় না, আর ছোটোবেলার ঐ রাতগুলোকে রুপকথার রাত মনে হয়।
The grass was greener
The light was brighter
When friends surrounded
The nights of wonder
~ হাসান
সিডনী, অস্ট্রেলিয়া
০৭.০৩.২০২৩

Friday, May 13, 2022

Jeetu Bhaiya vs me?

My student Shazzad sent this to me. I never knew who Jeetu bhaiya is, then I searched online and found that this is a character of a teacher at NETFLIX web series Kota factory who motivates his students and the students are great fans of him. 

I am pretty sure I don't deserve that much, but Looking back at my teaching career at BAUET, I felt a bit nostalgic. Life is too short and I believe I have got too much love, respect and support from my students in my very short teaching career. I know I cannot give you guys anything in return, but if I have made a small impact on any of your life, that should be my great achievement. God (Allah) bless you. And yeah, I miss you guys.. <3 




 

Thursday, August 19, 2021

তোমাদের জন্য ভালোবাসা

 গ্রাজুয়েশনের পরে আমার প্রথম চাকরী। আজ আমার ইউনিভার্সিটিত টিচিং ক্যারিয়ার এর ফার্স্ট ক্লাস। সি প্রোগ্রামিং এর ইন্ট্রো।  ঢাকাপারার হুল স্থুল ইন্টারনেট কানেকশনে- অনেক কাহিনী করে স্লাইড বানালাম। আমি কনফিউজড - পোলাপান আমার পড়ানোকে কেমনভাবে নেবে। সাথে নার্ভাসও বটে। চশমা পড়ে গেলাম, কারণ কে জানি বলেছিলো- চশমা না পরলে নাকি টিচার লাগে না। স্টুডেন্ট লাগে।

যাই হোক, টিচার টিচার ভাব নিয়ে ক্লাসে ঢুকলাম। EEE 2nd ব্যাচ। ক্লাসে ঢুকার পর সবার দিকে এক পলক তাকালাম। আমার একটা কবিতার দুই লাইন মনে পড়ে গেলো -

"ছেলেটা কেমন আবোল তাবোল, মেয়েটা কেমন পাগল পাগল"।

যাই হোক আমি পড়ানোতে মনোনিবেশ করলাম।  প্রথম ক্লাসে নরমালি শর্টকাটে পরিচয় পর্ব সেরে ফেলা উচিত। তাই আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে ওদের পরিচয় নিলাম। খেয়াল করলাম আমার থেকে বয়সে হয়তো ১, ২ বা ৩ বছরের জুনিওর ওরা। আর প্রচুর ফ্রেন্ডলি, তাই খুব সহজে আমার নার্ভাস ভাবটা কেটে গেলো। প্রথম দিনই ওরা আমাকে খুব আপন করে নিলো।  

আমার কেন জানি মনে হতো ফ্রেন্ডশিপ সবথেকে বেস্ট এই ব্যাচ এ। কোন গ্রুপিং নেই। আবার সবাই মিলেই একটা গ্রুপ। খুব ছোট একটা ব্যাচ যার ফলে সবাই রোল নাম্বার এর সাথে সাথে নামও মুখস্থ হয়ে গেল

যাইহোক এবার মূল বর্ণনায় আসি। এই ব্যাচটা আমার কাছে সবসময় স্পেশাল কারণ এখানেই আমার ফার্স্ট কোর্স নেয়া। তাই স্পেশাল ব্যাচের জন্য স্পেশাল লেখা।  আজকের লেখায় সবার সম্পর্কে কিছু লিখবো, যার সম্পর্কে যতটুকু মনে পড়ে।  

ক্লাসের সবথেকে প্রথম বেঞ্চে বসে নাফি নামের একটা ছেলে। এই ছেলেটাকে নিয়ে অনেক আগেই আমার কিছু লিখা উচিত ছিল। ছেলেটার রোল ১। রোল  যেমন এক, কাজেও তেমনি এক। একে তো ক্লাসে বেস্ট সিজিধারি (যদিও মেমি ওকে টেক্কা দিতো)। ও যখন থার্ড ইয়ারে, একদিন আমার কাছে এসে বললো- স্যার আমি একটা ড্রাফ্‌ট পেপার লিখছি, পাব্লিশ করবো। আমি ভাবলাম কেবল থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট, তাই ব্যাপারটা এতটা পাত্তা দিলাম না।  কিন্তু খানিকটা অবাক হলাম- ওর লেগে থাকা দেখে। বার বার ড্রাফ্‌ট মেইল করতো। আমই বিরক্ত হতাম, আবার হালকা ডিরেকশন ও দিতাম। আজ হাতে গুনে দেখলাম ওর সাথে আমার টোটাল আট টা পেপার চারটা  আইইইই কনফারেন্স,  ৪ টা জার্নাল। এখন ও নিজেই একটা  প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির টিচার। কি অদ্ভুত না!  

নাফির সাথে প্রথম বেঞ্চে বসতো স্বাধীন, সাজ্জাদ, মাহবুব আর বাদশাহ। স্বাধীন খুব ভদ্র শান্ত শিষ্ট অমায়িক একটা ছেলে । খুব চেষ্টা করে পড়াশোনার জন্য। সাথে সাথে সবাইকে হেল্প করে। ও এমন একটা ছেলে- একটা জব সার্কুলার হলে সেটা আগে সব ফ্রেন্ডদের সাথে শেয়ার দেবে, তারপর লাস্ট এ নিজে এপ্লাই করবে। মাহবুব আর বাদশাহ মধ্যে একটা জিনিস খুব কমন- সিজি অনেক ভালো, কিন্তু অল্পতেই খুব হতাশ হয়ে যায় যায়। একটু কিছু হলেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে- “স্যার, আমার যে কি হবে...” ওইদিন মাহাবুব এর সাথে কথা হলো- জব করতেছে, বিয়েও করেছে, হতাশা থাকার কথা না।

একদিন ফেসবুকে টাইমলাইনে হঠাৎ দেখে- টি ভি নিউজ- হেলিকপ্টারে করে কার জানিয়ে বিয়ে। ভিডিও দেখতে গিয়ে খেয়াল করি এটা আমাদের বাদশাহ। আরো বেশি অবাক হয়ে গেলাম যখন দেখলাম বাদশারসাথে বিয়ে হয়েছে আমারই ইস্টুডেন্ট ঊর্মির । ঊর্মি তুমি খুব ভালো একটা মেয়ে (আমার অনেক বড় ফ্যান!)। বাদশার এখন হতাশ ভাবটা থাকার কথা নয়। ভালই হোলো, দেশে গেলে দুই জনের কাছেই ট্রিট নেয়া যাবে। পাওনা থাকলো।

সাজ্জাদ কে নিয়ে লিখতে গেলে পাতা ফুরিয়ে যাবে। শুধু এতটুকুই বলব একটা ছেলে ব্যতিক্রম জনপ্রিয় একটা ছেলে। টিচারদের কাছেও বিখ্যাত স্টুডেন্টদের কাছে বিখ্যাতকি কারণে?? কারন ঝড়, তুফান, ভুমিকম্প, বন্যা যাই হোক না কেনো, ক্লাসে কোনো স্টুডেন্ট না আসলেও সাজ্জাদ আসবে। সব ক্লাসেই ওর উপস্থিতি ১০০%। 

সাজ্জাদের বাসা বগুড়ায়। আমার আপুর বাসাও ওখানে। ঈদের সময় একা বাড়ি গিয়ে মজা নাই। তাই একবার ঈদের সময় আমি আর সাজ্জাদ একসাথে বগুড়া গেলাম। সাজ্জাদ আমাকে জোর করে ওর বাসায় নিয়ে গেল। আন্টি খুব ভালো মানুষ। আমাকে অনেক বেশি খাওয়া- দাওয়া, আর আপ্যায়ন, করলেন। আন্টি বললেন- আমাকে তার অনেক পছন্দ হয়েছে তাই আমাকে ওনার এক আত্মীয়ার সাথে বিয়ে দিয়ে বগুড়ার জামাই বানাতে চান। সাজ্জাদও আন্টির সাথে শায় খিল খিল করে হেসে দিয়ে বললো বগুড়ার মেয়েরা নাকি খুবই ভালো আর সুন্দর হয়। স্যার কালকেই আপনাকে বউ দেখতে নিয়ে যাই। 

আমি গোগ্রাসে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আপুর বাসার উদ্দেশে রওনা দিলাম।

সাজ্জাদের ক্যাপ নিয়ে সবসময় টানাটানি করে যেই ছেলেটা তার নাম আলভী। প্রথম দিকে প্রচুর দুষ্টু একটা ছেলে ছিল। পরে এত ভদ্র আর চুপচাপ হয়ে যায় আমি অবাক হয়ে যাই। ওর এই পরিবর্তনের কারণ কি আস্ক করেছিলাম, মনে হয় প্রেমে ব্যার্থ- টাইপের কোন কারণ আছে। (আসলেই? আরে মজা করলাম) পড়ে ওর তোলা লেকচার খাতাটাই আমার কাছে পারফেক্ট মনে হলো, তাই ওটাই রেফারেন্স হিসেবে পরের সেমিস্টার ব্যাবহার করি। আলভীর পাশে বসত মেহেদী। বাড়ি চাঁপাই। ইচ্ছা ছিলো ওদের আমের বাগান থেকে আম পেড়ে খাবার, সময় হোলো না।  

আমি যাই পরাই বা যাই বলি না কেনো, তিনটা ছেলে খুব মনোযোগ দিয়ে কথা শুনতো- রুদ্র, দীপ্ত আর মর্তুজা। তিনজনেই খুব ভালো বন্ধু এবং খুব ভালো ছেলে। তিনজনই আমার খুব প্রিয় স্টুডেন্টদের মধ্যে অন্যতম। আমার মনে হয় আমি ভুল কোন কিছু বললেও ওরা ওটা ঠিক বলে মেনে নেবে। এক কথায় অন্ধ ভক্ত।


আদর্শ ছাত্র বলে যদি কিছু থেকে থাকে- রুদ্র তার একমাত্র উদাহরণ।  দীপ্ত খুব শান্তশিষ্ট ছেলে (যদিও ওর বন্ধুরা বলে লেজ বিশিষ্ট)। খুব ভালো ছেলে। এখন কখনো দেখি অ্যামেরিকায়, কখনো বাংলাদেশে। এখন কোথায় সেটাও তো জানি না। আওয়াজ দিও। একদম শেষ দিকে এসে আমাকে থিসিস সুপারভাইজার বানালো মরতুজা/ দীপ্ত । আমি বললাম আমি বাইরে চলে যাবো- পরে বিপদে পরবা। তারপরও ওরা মানল না। যতদিন আছে ততদিন  ছিলাম। আমার কিছু করার ছিল না । শেষমেশ আর তোমাদের জন্য কিছু করা হলো না। মুর্তজাকে দেখে আমার কেন যেন মনে হতো, ওর মনের মধ্যে কিছু একটা অজানা কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ওর সাথে যখন বগুড়ায় আড্ডা দিচ্ছিলাম আজিজুল হক  কলেজ ক্যাম্পাসে, তখন ওর মনের কথাগুলো বলেছিল।  বাইকে করে বগুড়া ঘুরে বেড়ানো- আহা সেই দিনগুলো।


নাম তার অনিক, ডাকনাম কৃষ। “প্যারা নাই চিল- চিল রে মামা- চিল”- এর একটা পারফেক্ট উদাহরন অনিক। সবসময় হাশিখুশি থাকে এই ছেলে। আমার কাছে মনে হয়- ও ক্লাসের শবথেকে সুখী মানুষ।  ওর একটা স্পেশাল থ্রি কয়ারতার ছিল, অইতা পরে ক্লাসে আসতো বৃহস্পতিবার। (আমার ব্রেইন অনেক শার্প না? লল।


সবথেকে পেছনের বেঞ্চে বসতো মাহিন, নাইম আর হাসান । তিনজনই খুব ভালো বন্ধু। মাহিন ছেলেটা খুব ভালো ভলিবল আর ফুটবল খেলে। অরে নিয়ে তো অনেক সৃতি, বড়াল ব্রিজে আড্ডা দেয়া, সুখ- দুঃখের গল্প করা, আরও কত কি! সব লিখে শেষ করা যাবে না।  কিছু কথা না বলাই থাক তবে ও আমাকে অনেক হেল্প করেছিল কিছু বিষয়ে।  নাইম আর রনি এই দুইজন হার্ডওয়্যার এর কাজে খুব ভালো। আমি একবার নাইম কে আরদুইন শিখাতে গেলাম, দেখি ও নিজেই আমার থেকে অনেক বেশি পারে (লল)। রনি ছেলেটা একটা জিনিশ খুব দ্রুত শিখে ফেলতে পারে। এটা ওর ভালো গুন। হাসানকে নিয়ে তেমন কিছু বলতে পারছিনা। খুব চুপচাপ থাকতো আমার ক্লাসে। যদিও ভেজা বিড়াল (লল)। ওরে দেখলেই আমার জুনায়েদ এর কথা মনে পড়ে (জুনাইদ- সাদিয়া)। ওর চুলের স্টাইলের কারনে হয়তো (লল)।


ক্লাসের মধ্যে নায়ক নামে পরিচিত শুভ। খুব ভালো গিটার বাজায়, আরও অনেক কিছু নাকি করে (সব ইম্প্রেস করার জন্নে বুঝি তো!) ওরে দেখলে আমার চোখের সামনে একটা নায়কের নাম মাসে তার নাম অনন্ত জলিল। খুব ভালো ছেলে। দেখলেই সালাম দেয়!


সব কিছুতেই সিরিয়াস একটা ছেলে- অভিক। একসাথে সব কিছু করতে চায়। পড়াশোনা, নাটক বানানো, সিনেমা বানানো, প্রজেক্ট বানানো আরো অনেক কিছু। ভালো ছেলে। ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব।  ইয়াসির আরাফাত ছেলেটা টেকনিক্যালি খুব সাউন্ড। তখনি ও খুব ভালো ইথিকাল হ্যাকিং এ ওস্তাদ। বাগাতিপারার মতো জায়গায় এই কাজ ক্যামনে চালায় যাইত চিন্তার ব্যাপার! ও নিজেই একটা স্টার্ট আপ কোম্পানি খুলেছে, খুব ভালো লাগলো দেখে।


নুর নেতা টাইপের ছেলে। ওকে ক্লাস করাতে গেলে উলটা। ওর অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া লাগতো। হাতেগোনা আমার দুই থেকে তিনটা ক্লাস করেছি কিনা ঠিক নাই। খুব সম্ভবত একটা মেয়ের ফেইক আইডি দিয়ে একবার আমার সাথে মজে নিতে চেষ্টা করছিলো (শিওর না)। ক্লাসের বাইরে খুব ভালো ছেলে, পড়াশোনা ভালো লাগে না, এর বাইরে সবকিছু ওর ভালো লাগে।


শিহাব নূরের জিগরি দোস্ত। চোখে দেখলেই ফাকি বাজি ধরা পড়ে। যদিও আমার সাথে কোন ফাকিবাজি করে নাই কখনো। ক্লাসের ফাঁকে স্যার পানি খাবো বলে বাইরে থেকে বাতাস খেয়ে আসতো। তমাল আর আজমির ভদ্র ছেলে। খুব ইন্ত্রভারত হওয়ায় ওদের সম্পর্কে তেমন কিছু বলতে পারছি না। পরান খুব সহজ সরল একটা ছেলে।  একবার হলে গিয়ে বুঝলাম ও বন্ধু হিসেবে সবথেকে বেস্ট, নিজে ক্যামেরা কিনে বন্ধুদের দিয়ে দিয়েছে, যা ছবি তোল। 


তৃষার ছেলেটা শবকিছুতেই খামখেয়ালী। খুব ভদ্র ও অমায়িক। যতদিন পেয়েছি চেষ্টা করেছে তাকে আটকে রাখার থাকল না। পরে অন্য ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হয়ে গেলো।  


এবার ক্লাসের মেয়েদের কথায় আসা যাক। এরা সবাই জানার পাশে বসবে। মেমি অনেক ভদ্র মেয়ে। ক্লাসের সেকেন্ড গার্ল। পোলাপানরা অকে অনেক পচায়, কিন্তু সে কোন রিঅ্যাক্ট করে না।  মেমি আর মাহিন আমার থিসিস স্টুডেন্ট ছিলো, তখন আমি বাইরে আসার জন্য খুব ব্যস্ত- তাই এত বেশি হেল্প করতে পারলাম না। ক্ষমা প্রার্থীএর জন্নে। মেমির অনেকদিন কোন খোজ নেয়া হয় নাই।


রথীর পড়াশোনা আমাদের দুনিয়ার সবকিছু ভালো লাগে। এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস এ সে খুব ভালো। ক্যাম্পাসে নাম ডাক আছে। মৌ আর সানজিদা খুব শান্তশিষ্ট এবং ভদ্র মেয়ে। ওদের নিয়ে কোন কিছু আন্দাজ করাটা কঠিন। সানজিদাকে দেখলে মনে হয় খুব কনফিউজ একটা মেয়ে। কয়দিন আগে রেফারেন্স লেটার দিলাম ভর্তি হয়েছে কুয়েটে এম এস এ। প্রমা আর মাহিন ভাই বোন টাইপ। খুব ভাল ফ্রেন্ডও। ছেলে মেয়ে ফ্রেন্ডশিপ এ আমি কখনো বিশ্বাস করি না। এদের দেখলে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয়। প্রোমা আমার ক্লাস খুব মনোযোগ দিয়ে পরে। আমার সাবজেক্ট এর সব থেকে হায়েস্ট নাম্বার পেয়েছিলে এতোটুকু মনে পড়ে।  সে নাকি সব স্যারদের কপি করতে পারে। একদিন সবার শয়াম্নে বললাম- আমাকে কপি করতে। সেটা আর করলো না।।


এখন আসি সামারি তে। অনেক জোস একটা ব্যাচ। ব্যাচের শিবাই জোস। আর খামখেয়ালী। অনেক আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করলাম, এদের জুনিয় ব্যাচের পোলাপান বিয়ে করে ফেলতেছে, কিন্তু এই দ্বিতীয় ব্যাচে বিবাহিতদের হার খুব কম। হয়তোবা এরা পড়াশুনার মতো বিয়ের ব্যাপারেও কেয়ারলেস। অন্তত এই জায়গায় ওদের সাথে আমার অনেক মিল।


কথা হচ্ছে তোমাদের নিয়ে এতকিছু লিখলাম কেন, এতদিন পর? আমার কাছে মনে হয়য় জীবনটা অনেক ছোট, তার মধ্যে খুব ভালো একটা সময় কাটিয়েছি তোমাদের সাথে। তোমাদের থেকে যে ভালবাসা আর সম্মান পেয়েছি, তার হয়তো আমাই যোগ্য নই। স্কুল লাইফে শিক্ষকদের দেখলে কেমন যেনো ভয় পেতাম। তখন থেকে নিজের মধ্যে একটা সংকোচ কাজ করতো। কখনো মঙ্খুলে কথা বলতে পারি নি।


নিজে টিচার হবার পরে আমি কখনো চাই নি স্টুডেন্ট রা আমাকে ভয় পাক। কখনো চাইনি ‘টিচার’ এর ট্যাগ ক্লাসের বাইরে গলায় ঝুইলিয়ে বেড়াতে। তাই ক্লাসের বাইরে চেষ্টা করেছি একজন ভালো বন্ধু হবার। জানি না কততুকু পেরেছি, কিন্তু বিনিময়ে তোমাদের থেকে যে ভালোবাসা আর সম্মান পেয়েছি, তা আজীবন মনে থাকার মতো। এজন্যই আমার প্রত্যেকটা স্টুডেন্ট আমার কাছে অনেক মুল্যবান এবং প্রিয়।


এই ব্যাচটা ছোট তাই লিখার শাহশ করলাম। সব ব্যাচের স্টুডেন্ট রাই মার প্রিয়। হয়তো সব ব্যাচে সবাইকে নিয়ে এভাবে কখনোই লিখার সময় পাবো না। তাই বলে মাইন্ড করো না। একদিন যেদিন অনেক সময় হবে- তখন হয়তো লিখবো। একজীবনে অনেক কিছু করতে ইচ্ছে হয়য়- কিন্তু সময় যে খুব কম।


বাউয়েটে আমার সব ভালো স্মৃতি সব। তিক্ত কোন সৃতি নেই। আমার সম্পর্কে তোমাদের কোনো সৃতি থাকলে কমেন্ট বক্সে লিখতে পারো। ইচ্ছা ছিল আসার আগে তোমাদের থেকে চিরকুট/ ডায়েরি লিখে নিবো, সময় হয়ে উঠে নাই। পরে তোমাদের থেকে গুগল ডকে একটা লিখা নিয়েছিলাম, ওটা পরে ডিলিট হয়ে গিয়েছে। তাই আমাকে নিয়ে তোমাদের কমেন্ট গুলো হয়তো আবার সেইভ করে রাখবো।


আর হ্যা- ভালো থেকো তোমরা। তোমাদের জন্য ভালোবাসা। 


Part of my biography- sweet memories with EEE 2nd batch

Wednesday, June 9, 2021

দোলনচাঁপা

 - আচ্ছা, মনে করো অনেক- অনেক দিন পর, একদিন তোমার সাথে দেখা করার খুব ইচ্ছে হলো। যদি দেখা করতে যাই তবে কি নিয়ে গেলে তুমি খুশি হবে?

- অবশ্যই ফুল।
- আচ্ছা। কি ফুল? গোলাপ? অথবা অপরাজিতা?
- নাহ। দোলনচাঁপা।

Monday, April 12, 2021

তার বেশ ক'বছর পর

তার বেশ ক'বছর পর

অফিস শেষে আজিজে যাচ্ছি
হঠাৎ শাহাবাগের মোড়ে সেই পুরোনো ঝিলিক দেখলাম
একাগ্র ঝর্ণার মত কল-কল রবে
এক মধুর তান ছিটকে পড়ছে তোমার চারপাশে
তুমি আর তোমার বন্ধুরা!
একগুচ্ছ ফুল তোমার হাতের শোভা বাড়াচ্ছে
জানি না... জানি না, ওগুলো কার আবেগের ডাক-হরকরা
আমি মানিব্যাগ থেকে সেই গোলাপটা বের করে দেখছি
প্রানহীন খটখটে
তুমি কি আমাকে দেখে ফেললে!
না-না, তা কি করে হবে
ওটা যখন ভীষন সজীবতায় উপস্থাপন করেছিলাম তোমার সামনে
তখনি তো তোমার চোখ এড়িয়েছিলো!

নীলিকা