তখন আমি ইন্টারে পড়ি। রংপুর ক্যান্টনমেন্টে।
সেকেন্ড ইয়ারের প্রথম দিকের কথা। probability'র অংকগুলো বেশ ঝামেলা করছে। একটা কিছু বুঝি না। তাসের অংক দিয়ে ভরা।
জন্ম থেকে এই পর্যন্ত তাসের কার্ড দু চোখে দেখার সৌভাগ্য হয় নি।
"তাস খেললে পুলিশ ধরে"- এই টাইপের কথাবার্তা ছোটবেলায় শুনেছিলাম।
মাথায় ভূত চাপল কার্ডের প্যাকেট কিনব। পরদিন ক্লাস শেষে ছুটে গেলাম জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে। বেছে বেছে ঢুকলাম বড় একটা দোকানে।
-মামা card এর প্যাকেট আছে?
-card মানে?
-মানে তাসের প্যাকেট।
দোকানদার অদ্ভূত দৃষ্টিতে আমার আমার আপাদমস্তক তাকালেন ।
-ক্যান্টের স্টুডেন্ট?
বুঝতে পারলাম ইউনিফর্ম দেখেই বেটা ধরে নিয়েছে।
মাথা নেড়ে বললাম- হুম।
-আছে কিন্তু দেয়া যাবে না।
-কেন...দেয়া যাবে না কেন...?
অপর পাশ থেকে ডাক আসলো- এই ছেলে…
আমি মাথা তুলে তাকালাম। মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক। অন্য client.
-জ্বি ভাই।
-আমাকে দেখে কি ভাই মনে হয়?
- জি না মানে sorry আংকেল।
-নাম কি?
-মুবিন।
-পুরো নাম বলো।
-মাহমুদুল হাসান মুবিন।
-কোন ক্লাস?
-ক্লাস টুয়েলভ।
-তাস দিয়ে কি করবা?
-অংক শিখব আংকেল, প্রোবাবিলিটির অংক।
-ফাইজলামি পাইছ?
-না আংকেল, সত্যি সত্যি। তাসের প্যাকেটে কয়টা কার্ড থাকে, সাদা কয়টা, লাল কয়টা, টেক্কা কয়টা এগুলো জানতে হয়।
-আমারে কি তুমি পড়ালেখা শিখাচ্ছ? আমাদের যুগে কি পড়াশুনা ছিল না? আমরা কি পড়াশুনা করি নাই?
আমি চুপ মেরে গেলাম। নীরবতাই উত্তম পন্থা।
-বাবা কি করে?
-চাকরি। DPHEতে। Department of Public Health Engineering.
- দাও,তোমার আব্বুর নাম্বারটা দাও। একটু বয়ান করে দেই তাঁর ছেলে কি করে বেড়াচ্ছে...
-না মানে আংকেল লাগবে না- আমি আর কার্ড কিনব না। আর আমি আসলে আংকেল খারাপ ছেলে না..
-দেখো ছেলে,বাবা-মা টাকা পয়সা খরচ করে পড়াশুনার জন্য- তাস খেলার জন্য না..বুঝলা…?
আমি পুরাই বোকা বনে গেলাম। একটুর জন্যে কেঁদে দিলাম না। মেসে থাকি। কান্না দেখারও কেউ নেই। আম্মুই তো বলেছে, ছেলে মানুষ- কাঁদতে নেই। আমি দ্রুত কেটে পড়লাম।
অন্য এক দোকানে গেলাম- সেও ভাগিয়ে দিল।
নিজের উপর প্রচণ্ড রাগ হল। বুঝতে পারলাম- বোকামিটা করেছি কলেজ ড্রেস পড়ে এসে।
পরদিন গেলাম সিভিল ড্রেসে।আগে কিনলাম ব্রেসলেট- পরে কিনলাম তাসের প্যাকেট । discrete math এর আরও একটা বই কিনলাম। জিদ করে ঐ দিনই শেষ করে দিলাম প্রোবাবিলিটির সবগুলো অংক। crystal clear.
HSCর পড়ে বাসায় এসে শো-কেসের এক কোনে লুকিয়ে রেখেছিলাম প্যাকেটটা। ভার্সিটিতে উঠলে হয়তোবা কার্ড খেলা শেখা যাবে।
অনেক দিন কেটে গেছে। ঘটনাটা কাউকে বলার সাহস পাই নি। আজ সাহস করে লিখে ফেললাম।
কুয়েট লাইফের অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে… কার্ড খেলা এখনো শেখা হয়ে ওঠে নি। হয়তোবা শো-কেসের কোনের কার্ডগুলা সব নতুনই আছে। খুলে দেখারও সময় হয় নি...
আমার maximum বন্ধুই কার্ড খেলতে পারে। আমি শুধু হা করে চেয়ে দেখি। বন্ধুরা বলে- “কি দোস্ত কি করলা লাইফটাতে... না পারলা কার্ড খেলা শিখতে, না পারলা অন্য কিছু করতে...”
আমি আবারও চুপ মেরে যাই। মনে পড়ে যায় সেই আংকেল এর কথাগুলো...মনের অজান্তেই shuffle করতে থাকি- চার তেরোয় বায়ান্ন... হরতন,রুইতন,ইশকাবন, চিরিয়া...........
সেকেন্ড ইয়ারের প্রথম দিকের কথা। probability'র অংকগুলো বেশ ঝামেলা করছে। একটা কিছু বুঝি না। তাসের অংক দিয়ে ভরা।
জন্ম থেকে এই পর্যন্ত তাসের কার্ড দু চোখে দেখার সৌভাগ্য হয় নি।
"তাস খেললে পুলিশ ধরে"- এই টাইপের কথাবার্তা ছোটবেলায় শুনেছিলাম।
মাথায় ভূত চাপল কার্ডের প্যাকেট কিনব। পরদিন ক্লাস শেষে ছুটে গেলাম জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে। বেছে বেছে ঢুকলাম বড় একটা দোকানে।
-মামা card এর প্যাকেট আছে?
-card মানে?
-মানে তাসের প্যাকেট।
দোকানদার অদ্ভূত দৃষ্টিতে আমার আমার আপাদমস্তক তাকালেন ।
-ক্যান্টের স্টুডেন্ট?
বুঝতে পারলাম ইউনিফর্ম দেখেই বেটা ধরে নিয়েছে।
মাথা নেড়ে বললাম- হুম।
-আছে কিন্তু দেয়া যাবে না।
-কেন...দেয়া যাবে না কেন...?
অপর পাশ থেকে ডাক আসলো- এই ছেলে…
আমি মাথা তুলে তাকালাম। মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক। অন্য client.
-জ্বি ভাই।
-আমাকে দেখে কি ভাই মনে হয়?
- জি না মানে sorry আংকেল।
-নাম কি?
-মুবিন।
-পুরো নাম বলো।
-মাহমুদুল হাসান মুবিন।
-কোন ক্লাস?
-ক্লাস টুয়েলভ।
-তাস দিয়ে কি করবা?
-অংক শিখব আংকেল, প্রোবাবিলিটির অংক।
-ফাইজলামি পাইছ?
-না আংকেল, সত্যি সত্যি। তাসের প্যাকেটে কয়টা কার্ড থাকে, সাদা কয়টা, লাল কয়টা, টেক্কা কয়টা এগুলো জানতে হয়।
-আমারে কি তুমি পড়ালেখা শিখাচ্ছ? আমাদের যুগে কি পড়াশুনা ছিল না? আমরা কি পড়াশুনা করি নাই?
আমি চুপ মেরে গেলাম। নীরবতাই উত্তম পন্থা।
-বাবা কি করে?
-চাকরি। DPHEতে। Department of Public Health Engineering.
- দাও,তোমার আব্বুর নাম্বারটা দাও। একটু বয়ান করে দেই তাঁর ছেলে কি করে বেড়াচ্ছে...
-না মানে আংকেল লাগবে না- আমি আর কার্ড কিনব না। আর আমি আসলে আংকেল খারাপ ছেলে না..
-দেখো ছেলে,বাবা-মা টাকা পয়সা খরচ করে পড়াশুনার জন্য- তাস খেলার জন্য না..বুঝলা…?
আমি পুরাই বোকা বনে গেলাম। একটুর জন্যে কেঁদে দিলাম না। মেসে থাকি। কান্না দেখারও কেউ নেই। আম্মুই তো বলেছে, ছেলে মানুষ- কাঁদতে নেই। আমি দ্রুত কেটে পড়লাম।
অন্য এক দোকানে গেলাম- সেও ভাগিয়ে দিল।
নিজের উপর প্রচণ্ড রাগ হল। বুঝতে পারলাম- বোকামিটা করেছি কলেজ ড্রেস পড়ে এসে।
পরদিন গেলাম সিভিল ড্রেসে।আগে কিনলাম ব্রেসলেট- পরে কিনলাম তাসের প্যাকেট । discrete math এর আরও একটা বই কিনলাম। জিদ করে ঐ দিনই শেষ করে দিলাম প্রোবাবিলিটির সবগুলো অংক। crystal clear.
HSCর পড়ে বাসায় এসে শো-কেসের এক কোনে লুকিয়ে রেখেছিলাম প্যাকেটটা। ভার্সিটিতে উঠলে হয়তোবা কার্ড খেলা শেখা যাবে।
অনেক দিন কেটে গেছে। ঘটনাটা কাউকে বলার সাহস পাই নি। আজ সাহস করে লিখে ফেললাম।
কুয়েট লাইফের অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে… কার্ড খেলা এখনো শেখা হয়ে ওঠে নি। হয়তোবা শো-কেসের কোনের কার্ডগুলা সব নতুনই আছে। খুলে দেখারও সময় হয় নি...
আমার maximum বন্ধুই কার্ড খেলতে পারে। আমি শুধু হা করে চেয়ে দেখি। বন্ধুরা বলে- “কি দোস্ত কি করলা লাইফটাতে... না পারলা কার্ড খেলা শিখতে, না পারলা অন্য কিছু করতে...”
আমি আবারও চুপ মেরে যাই। মনে পড়ে যায় সেই আংকেল এর কথাগুলো...মনের অজান্তেই shuffle করতে থাকি- চার তেরোয় বায়ান্ন... হরতন,রুইতন,ইশকাবন, চিরিয়া...........
No comments:
Post a Comment