Tuesday, September 13, 2016

ফিরে দেখা: আমি ও আমার কুয়েট


 
এখানে আসার কোন ধরনের ইচ্ছাই ছিল না আমার আব্বু বলল IUT তে ভর্তি হও। আমার ইচ্ছা ঢাকা ভার্সিটি তে ভর্তি হবার। বড়আপু বলল যাও ক্যাম্পাস গিয়া Decision নাও।  আমি জামাল ভাইকে নিয়া গাজীপুর গেলাম। আই ইউ টি ক্যাম্পাসে গিয়া আমি চিন্তা করতেছি টি এস সি কথা। জামাল ভাইকে বললাম টি এস সি চলেন। কার্জন হল ঘুইরা আসি।

ঢাকা ভার্সিটি গিয়া টি এস সি বটমূলে বইসা আমি চিন্তা করতেসি আমার ভবিষ্যতের কথা। আব্বুকে ফোন দিলাম। ঘনিষ্ঠ কলেজ ফ্রেন্ড সাইদরে ফোন দিলাম। বললাম- তুমি যেইখানে ভর্তি হবা আমিও ওইখানে- এইটাই ফাইনাল এই জায়গায় বইসাই লাস্ট Decision ফাইনাল করলাম। Decision ফাইনাল কুয়েট। যা আছে জীবনে। যা যাবে দুইজনের উপর দিয়াই যাবে। কুয়েট অধ্যায়ের শুরু।

কুয়েটে প্রথমের দিনগুলা খুব খারাপ যেত আমার। ঢাকার মায়াটা কিছুতেই ত্যাগ করতে পারতেছিলাম না। ক্লাস টেস্ট এর মার্কস গুলাও খুব একটা ভালো আসতো না আমার সাইদরে মাঝে মধ্যেই বললাম পড়াশুনা বাদ দিবো। ফার্স্ট CT তে কম মার্কস পাইয়া বিড়ি খাইতে লাগছিলাম আশিকের(23) সাথে গিয়া ভাগ্যিস বিড়ি আমার কাছে হার মানলো! শেষমেশ একটা টানও দিতে পারলাম না!
হতাশা কাটানোর জন্য বাসায় না জানিয়েই টিউশনি ধরলাম। আতিক, সাইদ, সৌমিত্র দের সাথে ভালই কাটছিল দিনগুলি। মাঝে মধ্যে আমাদের আড্ডা চলতো রাত - টা পর্যন্ত। আড্ডার মূল প্রতিপাদ্য কিভাবে মেয়ে পটানো যায়। সাইদ মাঝে মধ্যে জ্ঞান দিতো আমাদের আতিকের সাথে মাঝে মধ্যে তর্ক লাগতো নানা বিষয় নিয়ে। দুইদিন পর আবার সব কিছু ঠিক।

ফার্স্ট ইয়ারে খানাবাড়ী গার্লস স্কুলের সামনে দিয়ে ক্যাম্পাস যাবার সময় মেয়েগুলা খুব উৎপাত করতো আমাদের সাইদ মেয়ে দেখলে ভয়ে দৌড়ে পালাত সৌমিত্র হা করে তাকিয়ে থাকতো আমি আর আতিক মজা নিতাম আর আমাদেরলুনা মঞ্জিলএর ঠিক opposite পাশের বাড়িটা? ওইটা তো ইতিহাস হয়েই থাকবে।

হলে উঠলাম। অসাধারণ তিনজন রুমমেট পেলাম। তোদের মতো ট্যালেন্টেড  রুমমেট পাওয়া সত্যিই বড় ভাগ্যের ব্যাপার। হানিফ- মনের সব কথা কইতাম তরে, এখন শুনার লোক নাই। কতো শত হেল্প না পাইছি তোর থেকে! একটু ঝগড়া হলেই ভাবি ফোন দিয়া বলত, “আপনার রুমমেট এমন কেন?” এখন আর কেউ সে কথা বলে না... আর চাঁপাই এর আম!  তোর শাশুড়ির পাঠানো হাঁসের মাংস! কখনো কি ভুলব এইসব আমরা। অন্তিক-তুই আসলেই পাংচুয়াল পোলা। এতকিছু সামলাছ ক্যামনে? রুমে বহুত পঁচাইতাম তোরে, কিন্তু বাইরে গিয়া ভাব নিয়া কইতাম আমার রুমমেট জিরোর সাধারণ সম্পাদক।  তুই নামাজে ডাকলে আর কুরআন পড়তে বললে আমার আম্মুর কথা মনে পড়তো। তরে কোনদিন বলা হয় নাই। মাঝে মধ্যে কি পরিমান মারামারি বাঁধাইতাম আমরা! একবার তো আমার লুঙ্গিটাই ছিঁড়ল! বাঁধন- অনেক ভালো পোলা তুই। অনেক ভালো কিছু করবি ভবিষ্যতে ইনশাআল্লাহ্ অনেক বড় Entrepreneur হবি।

ক্লাসের সেকেন্ড row টা অনেক বেশি মিস করবো। আতিক ছাড়া ল্যাবগুলা করা impossible ছিল ল্যাবে খুব তালগোল পাকিয়ে ফেলতাম আমি। মাঝে মধ্যে তোমারে দেইখা খুব অবাক হতাম আমি। আমার দেখা অল্প কয়েকজন মাল্টি-ট্যালেনটেড পোলার মধ্যে তুমি একজন সাইদ, ইয়াকুব, আতিক- কতই না হেল্প পাইছি তোদের থেকে। সৌমিত্র, আকিফ(Buddy), সাহেদ(Babu), কৌশিক, আসিফ, জুয়েল (৩৮), জুয়েল (programmer), লিকু, শোভন তোরা আর কম কি!

কুয়েট আমার রুট। যতই গালিগালাজ করি না কেন, এই চার বছর আর ভুলি ক্যামনে!! তোদের মতন ফ্রেন্ড পামু না জীবনে। ফ্রেন্ডশিপ ছিল, আছে, থাকবে ইনশা আল্লাহ্ শেষসময় এসে ভালো কিছু জুনিয়র পাইলাম। মাঝে মধ্যে এসে খোঁজ নিতো। উপদেশ দিতো। ভালো থাকিস তোরা, অনেক ভালো। আর পারলে এই অধমটারে মনে রাখিস।


No comments:

Post a Comment